সংগীতের মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই
রেগে সংগীতের কিংবদন্তি বব মার্লে শুধু একজন শিল্পীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন সামাজিক বিপ্লবী। জ্যামাইকার দরিদ্র বস্তি থেকে উঠে আসা এই শিল্পী তাঁর গানের মাধ্যমে বর্ণবাদ ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।
জন্ম থেকেই বৈষম্যের শিকার
জন্মের পর থেকেই বব মার্লে বর্ণবৈষম্যের শিকার হন। কৃষ্ণাঙ্গ মা ও শ্বেতাঙ্গ বাবার সন্তান হওয়ায় দুই সমাজেই তিনি প্রত্যাখ্যাত হন। এই অভিজ্ঞতা তাঁকে সাদা-কালোর দ্বন্দ্বের বাস্তবতা বুঝতে সাহায্য করে। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মানুষেরا যতদিন শান্তি না পাবে, ততদিন এই যুদ্ধ চলবে।
সংগীত যাত্রার শুরু
মাত্র ১৮ বছর বয়সে কয়েকজন বন্ধু নিয়ে তিনি 'টিনএজারস' নামে একটি ব্যান্ড গঠন করেন, যা পরবর্তীতে 'দ্য ওয়েইলার্স' নামে পরিচিত হয়। এই ব্যান্ডের মাধ্যমে তিনি আফ্রিকার নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠেন।
৭০-এর দশকের বিপ্লবী কণ্ঠ
সত্তরের দশকে বব মার্লের প্রভাব ছিল অসামান্য। বেনি বাঁধা লম্বা জটা চুলের এই শিল্পী তাঁর গানের মাধ্যমে পুঁজিবাদী শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। তাঁর গান ক্রমশ পুঁজিবাদী শক্তির কাছে হুমকি হয়ে ওঠে।
হত্যাচেষ্টাও পারেনি থামাতে
১৯৭৬ সালের ৩ ডিসেম্বর, একটি শান্তি কনসার্টের দুই দিন আগে তাঁর ওপর হত্যাচেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু আহত অবস্থায়ও তিনি নির্ধারিত সময়ে আশি হাজার দর্শকের সামনে মঞ্চে উঠে প্রতিবাদী গান পরিবেশন করেন।
অমর সৃষ্টি
বব মার্লে তাঁর সংগীত জীবনে প্রায় পাঁচশ গান রচনা ও সুরারোপ করেন। তাঁর 'ওয়ান লাভ' গানটিকে বিবিসি শতাব্দীর সেরা গান হিসেবে নির্বাচিত করেছে। ১৯৯৯ সালে টাইম ম্যাগাজিন 'বব মার্লে অ্যান্ড দ্য ওয়েইলার্স' অ্যালবামটিকে বিশ শতকের সেরা অ্যালবাম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
অসমাপ্ত যুদ্ধের উত্তরাধিকার
মাত্র ৩৬ বছর বয়সে এই মহান শিল্পীর জীবনাবসান ঘটে। তবে মৃত্যুর চার দশক পরেও তাঁর গান আজও মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লড়াই এখনো শেষ হয়নি।
Post a Comment