বিজ্ঞান বলছে, আলিঙ্গন শুধু আবেগের প্রকাশ নয়, এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী
প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরা শুধু ভালোবাসার প্রকাশ নয়, এটি আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলি দেখিয়েছে যে নিয়মিত আলিঙ্গন আমাদের জীবনমানের উন্নতি করতে পারে। আসুন জেনে নেই আলিঙ্গনের সাতটি অপ্রত্যাশিত স্বাস্থ্য সুবিধা।
মানসিক সুস্থতা বৃদ্ধি
আলিঙ্গন করলে শরীরে অক্সিটোসিন নামক হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে। এই হরমোন মস্তিষ্কে ইতিবাচক অনুভূতি জাগায়, যা মনকে প্রফুল্ল রাখে। ফলস্বরূপ, নিয়মিত আলিঙ্গন মানসিক সুস্থতা বৃদ্ধি করে এবং পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থা জোরদার করে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
যাঁরা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তাঁদের জন্য আলিঙ্গন একটি প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে কাজ করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, আলিঙ্গনের সময় ত্বকের স্পর্শ পেসিনিয়ান করপাসক্যালসকে সক্রিয় করে, যা ভেগাস নার্ভকে উদ্দীপিত করে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
মানসিক ভীতি দূরীকরণ
সাইকোলজিক্যাল সাইন্স জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, নিয়মিত আলিঙ্গন মৃত্যুভয়সহ বিভিন্ন মানসিক ভীতি কমাতে সাহায্য করে। এমনকি একটি নিরীহ টেডি বিয়ার জড়িয়ে ধরলেও মানসিক ভয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
হৃদযন্ত্রের সুস্থতা
বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে আলিঙ্গন হৃদস্পন্দনকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। উত্তর ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আলিঙ্গনের পর অংশগ্রহণকারীদের হৃদস্পন্দন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা হৃদযন্ত্রের সুস্থতার ইঙ্গিত দেয়।
মানসিক চাপ হ্রাস
প্রিয়জনকে আলিঙ্গন করলে শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমে যায়। এর ফলে মানসিক চাপ হ্রাস পায় এবং শরীরে একটি শান্ত ও শিথিল অনুভূতি আসে। কর্মজীবনের চাপ থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত আলিঙ্গন একটি কার্যকর উপায় হতে পারে।
শিশুদের সুস্থ বিকাশ
শিশুদের ক্ষেত্রে আলিঙ্গনের গুরুত্ব অপরিসীম। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত আলিঙ্গন পাওয়া শিশুরা কম ভয় ও অস্থিরতা অনুভব করে। এটি তাদের মানসিক বিকাশে সহায়তা করে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই তাদের শরীরে স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমায়।
বার্ধক্যে সহায়ক
ওহাইও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে আলিঙ্গনের প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়ে যায়। বয়োবৃদ্ধদের মধ্যে প্রায়শই দেখা যায় হতাশা ও বিষণ্নতা, যা আলিঙ্গনের মাধ্যমে লাঘব করা সম্ভব। নিয়মিত আলিঙ্গন তাদের মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে এবং শারীরিক সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে, আলিঙ্গন শুধু একটি সামাজিক রীতি নয়, এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই, আজই থেকে আপনার প্রিয়জনদের সাথে নিয়মিত আলিঙ্গনের অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটি আপনার ও আপনার প্রিয়জনদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
Post a Comment