বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও জীবনশৈলী সংশোধনে মিলতে পারে সমাধান
বর্তমান বিশ্বে সন্তানহীন দম্পতির সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে বন্ধ্যাত্বের হার ১.৫ শতাংশ বেশি। এই সমস্যার পিছনে রয়েছে নানা কারণ, যার মধ্যে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনশৈলী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
বন্ধ্যাত্বের প্রধান কারণসমূহ:
১. অতিরিক্ত ওজন ও মেদবহুলতা
২. ধূমপান ও মদ্যপান
৩. শারীরিক আঘাত
৪. কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
৫. দীর্ঘসময় ল্যাপটপ ব্যবহার
খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব:
১. প্রসেসড মিট: বেকন, সালামি, হটডগ, বার্গার ইত্যাদি শুক্রাণুর সংখ্যা কমাতে পারে।
২. রেড মিট: গবেষণায় দেখা গেছে, রেড মিট বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে মুরগির মাংসে এমন প্রভাব দেখা যায়নি।
৩. দুগ্ধজাত খাবার: গবাদি পশুর খাদ্যে ব্যবহৃত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের প্রভাব দুধে থাকে, যা শুক্রাণুর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৪. ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড: এটি শুধু হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় না, বরং শুক্রাণুর গুণগত মানও কমিয়ে দেয়।
৫. রাসায়নিক দ্রব্য: অধিকাংশ খাদ্যে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ শুক্রাণুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
প্রতিরোধের উপায়:
১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা: প্রসেসড ও রেড মিটের পরিবর্তে সবুজ শাকসবজি, ফল, ও মাছ বেশি করে খাওয়া।
২. ওজন নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত ব্যায়াম ও সুষম খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা।
৩. মদ্যপান ও ধূমপান ত্যাগ: এগুলো শুক্রাণুর গুণগত মান ও সংখ্যা উভয়কেই প্রভাবিত করে।
৪. জৈব খাদ্য গ্রহণ: যতটা সম্ভব রাসায়নিকমুক্ত, জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত খাবার গ্রহণ করা।
৫. ল্যাপটপ ব্যবহারে সতর্কতা: দীর্ঘসময় ল্যাপটপ কোলে রেখে ব্যবহার না করা।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
১. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: বিশেষ করে শুক্রাণুর গুণগত মান ও সংখ্যা পরীক্ষা করা।
২. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: যোগব্যায়াম, ধ্যান ইত্যাদির মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো।
৩. পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো।
৪. ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ: জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, ভিটামিন সি ও ই সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা।
উপসংহার:
বন্ধ্যাত্ব একটি জটিল সমস্যা, যার পিছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনশৈলী পরিবর্তনের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যে কোনো উদ্বেগের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন শুধু বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধেই নয়, সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Post a Comment