দেশের ৩০ শতাংশ মানুষের লিভার ঝুঁকিতে; জানুন লক্ষণ ও প্রতিরোধের কৌশল
প্রতিবেদন:
লিভার - শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রায়শই অবহেলিত থেকে যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক: বাংলাদেশের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। এই নীরব ঘাতক রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ প্রকাশ না করেই ধীরে ধীরে লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ফ্যাটি লিভারের ক্রমবিকাশ:
১. প্রাথমিক পর্যায়:
- লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়
- কোনো উপসর্গ দেখা যায় না
- সাধারণত অন্য রোগের পরীক্ষায় ধরা পড়ে
২. মধ্যবর্তী পর্যায়:
- পেটের ডান দিকে হালকা ব্যথা
- পেট ভারী ভারী লাগা
- লিভারে প্রদাহ শুরু
৩. উন্নত পর্যায়:
- শারীরিক দুর্বলতা
- ক্ষুধামন্দা
- ওজন হ্রাস
- জন্ডিস
৪. জটিল পর্যায়:
- লিভার সিরোসিস
- হাত-পায়ে পানি জমা
- রক্তবমি
৫. চরম পর্যায়:
- লিভার ক্যান্সার
- লিভার বৃদ্ধি
- জীবনকাল হ্রাস
লিভার সুস্থ রাখার উপায়:
১. ওজন নিয়ন্ত্রণ:
- শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পরিমিত খাবার গ্রহণ
- সুষম ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা
২. নিয়মিত ব্যায়াম:
- প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট শারীরিক পরিশ্রম
- নিয়মিত খেলাধুলায় অংশগ্রহণ
৩. মদ্যপান পরিহার:
- অ্যালকোহল লিভারের জন্য ক্ষতিকর
- সম্পূর্ণ বর্জন বা নিয়ন্ত্রিত পানের অভ্যাস গড়া
৪. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
- বছরে অন্তত একবার লিভার ফাংশন টেস্ট করা
- চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা
৫. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট:
- নিয়মিত ধ্যান বা যোগব্যায়াম করা
- পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফ্যাটি লিভার শুধুমাত্র একটি রোগ নয়, এটি অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার সূচনা করতে পারে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মতো রোগগুলি ফ্যাটি লিভারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। তাই, লিভারের স্বাস্থ্য রক্ষা করা মানে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি।
উপসংহার:
লিভার আমাদের শরীরের 'সাইলেন্ট ওয়ার্কার'। এটি নীরবে কাজ করে যায়, কিন্তু এর স্বাস্থ্য ব্যাহত হলে তার প্রভাব পড়ে সারা শরীরে। তাই, আজ থেকেই শুরু করুন লিভার-বান্ধব জীবনযাপন। মনে রাখবেন, প্রতিরোধই চিকিৎসার চেয়ে সহজ ও কার্যকর। সুস্থ লিভার, সুস্থ জীবনের প্রথম ধাপ।
Post a Comment