বাবার ন্যায়বিচার না পেলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি গায়ক তবিবের

রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে চাকরিচ্যুত পিতার জন্য ন্যায়বিচার দাবি করলেন প্রতিবাদী সঙ্গীতশিল্পী



সাম্প্রতিক বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত মাহমুদ হাসান তবিব নিজের পারিবারিক ট্র্যাজেডি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি আবেগঘন পোস্ট করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্র তাঁর বাবার প্রতি হওয়া অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন এবং ন্যায়বিচার না পেলে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন।


তবিবের অভিযোগ, ২০১৮ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনের নির্দেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে অবৈধভাবে বরখাস্ত করেন। সেই অধ্যক্ষ ছিলেন তবিবের বাবা মুহাম্মদ ফজলুর রহমান। এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় অধ্যাপক নজরুল ইসলাম চঞ্চলকেও নির্যাতন করা হয় বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।


ফেসবুক পোস্টে তবিব লিখেছেন, "সেদিন আম্মু আমাকে ফোন দিয়ে বলল, 'ওরা তোমার আব্বুকে বন্দি করেছে। তাকে তুলে নিয়ে যাবে। তুমি কিছু করো।' আমি ঢাবির কলা ভবনের চতুর্থ তলায় আরবি বিভাগের বারান্দায় দাঁড়িয়ে মায়ের আর্তনাদ শুনছিলাম আর দেখছিলাম অপরাজেয় বাংলার সামনে দিয়ে শোডাউন যাচ্ছে—জয় বাংলা।"


২০১৯ সাল থেকে তবিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের অংশ হিসেবে সরকারের বিভিন্ন সমালোচনামূলক গান প্রকাশ করতে থাকেন। এর ফলে তাঁর পরিবারের ওপর চাপ বাড়তে থাকে বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে তিনি এই চাপের কথা কখনও প্রকাশ্যে বলেননি।


ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়ে তবিব লিখেছেন, "যদি আমার পিতার মতো হাজার হাজার নির্যাতিত শিক্ষক এখন ন্যায় বিচার না পায়, তবে আমি বিদ্রোহ করব। আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ শতশত শহীদ রক্তে আগুন জ্বালিয়েছে। ইনসাফ চাই, ন্যায়বিচার।"


একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তবিব জানিয়েছেন, মানুষের সাম্য-অধিকার নিয়ে গান তৈরি করলেও তিনি এবং তাঁর পরিবারই হয়েছেন নির্যাতনের শিকার। এই কারণে প্রয়োজনে বঞ্চনার শিকার শিক্ষকদের নিয়ে আন্দোলনে নামার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।


তবিবের এই পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই তাঁর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এবং ন্যায়বিচারের দাবি তুলেছেন। এদিকে, সরকারি কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।


এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর এখনও জীবন্ত রয়েছে। তবিবের মতো তরুণ শিল্পীদের সাহসী পদক্ষেপ সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আশা জাগায়।

Post a Comment