৩০-৪০ বছর বয়সী হৃদরোগীদের ৪০% এর ক্ষেত্রে মানসিক চাপ প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত
মানিপাল হাসপাতাল, গুরুগ্রামের সিটিভিএস বিভাগের প্রধান ও পরামর্শদাতা ডা. মনমোহন সিং চৌহান জানিয়েছেন, আমাদের কাছে আসা হৃদরোগীদের মধ্যে, বিশেষ করে ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী রোগীদের ক্ষেত্রে, ৪০% এর জন্য মানসিক চাপ একটি প্রধান অবদানকারী কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
জীবনের শুরু থেকেই মানসিক চাপের সূচনা
এই মানসিক চাপ প্রায়শই জীবনের খুব প্রাথমিক পর্যায়ে শুরু হয়। স্কুল জীবনে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার চাপ থেকে এর সূচনা হয়। কলেজে এসে ভালো গ্রেড পাওয়ার চাপ অব্যাহত থাকে। কর্মজীবনে প্রবেশের পর, একটি নির্দিষ্ট জীবনযাত্রার মান বজায় রাখার চাপ আমাদের গ্রাস করে - ভালো গাড়ি, উপযুক্ত পোশাক, উন্নতমানের খাবার, এবং আরামদায়ক বাসস্থান।
কর্মক্ষেত্রে বিষাক্ত পরিবেশের প্রভাব
ডা. চৌহান বলেন, "অনেকের জন্য কর্মক্ষেত্রের বিষাক্ত পরিবেশ মানসিক চাপের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। এর একটি প্রধান উৎস হল আমাদের সংস্থায় প্রাসঙ্গিক থাকার চাপ। আমরা সর্বদা নতুন কিছু চেষ্টা করার এবং উদ্ভাবনী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি, যা নিজেই মানসিক চাপের একটি বড় উৎস।"
সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা
সামাজিক মাধ্যমও মানসিক চাপ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। অনেক তরুণ প্রভাবক তাদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রা প্রদর্শন করে, যা অন্যদের মধ্যে অনুপযুক্ততার অনুভূতি জাগাতে পারে, যেহেতু তারা অনুরূপ উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে না। এই অপর্যাপ্ততার বোধ অসন্তোষের জন্ম দিতে পারে, যা আরও মানসিক চাপ বাড়ায়।
মানসিক চাপ মোকাবেলার অপকারী পদ্ধতি
এই মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে, কিছু মানুষ সামাজিকতার দিকে ঝুঁকে পড়ে, যার মধ্যে কাজের বিরতিতে বন্ধুদের সাথে ধূমপান করা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এই অভ্যাস প্রায়শই সন্ধ্যায় মদ্যপান করার দিকে নিয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, মাত্র দুই ঘণ্টায় চার পেগ মদ্যপান করলে হৃদরোগের ঝুঁকি ৭০% বেড়ে যায়। আমরা সবাই জানি যে ধূমপান হৃদরোগের একটি প্রধান ঝুঁকি, তবুও অনেকে এটিকে মানসিক চাপ কমানোর উপায় হিসেবে ব্যবহার করে, যা বিডম্বনাক্রমে হৃদরোগের দিকে নিয়ে যায়।
মানসিক চাপের শারীরিক প্রভাব
মানসিক চাপ আমাদের শরীরে কী পরিবর্তন আনে? মানসিক চাপ কর্টিসোল নামক একটি হরমোন নিঃসরণ করে, যা ক্রমাগত উচ্চ মাত্রায় থাকে। স্বাভাবিকভাবে, কর্টিসোল যুদ্ধ-বা-পলায়ন পরিস্থিতিতে নিঃসৃত হয়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ কর্টিসোল স্তর উচ্চ রাখে। এটি হৃদযন্ত্রে অক্সিডেটিভ ক্ষতি এবং স্থায়ী প্রদাহের অবস্থার দিকে নিয়ে যায়। উচ্চ কর্টিসোল স্তর হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় - যা সবই হৃদরোগের প্রধান ঝুঁকি।
মানসিক চাপ মোকাবেলায় জীবনধারার পরিবর্তন
এর মোকাবিলায়, আমাদের জীবনধারার পরিবর্তন আনতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে একঘণ্টা ধ্যান ও ব্যায়ামের জন্য নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের সাথে মানসম্পন্ন সময় কাটানোও উপকারী। নিজেকে অকৃতকার্য মনে করা এড়ানো এবং যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিবর্তনগুলি করে, আপনি কার্যকরভাবে মানসিক চাপের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং একটি সুস্থ হৃদয় বজায় রাখতে পারেন।
Post a Comment