প্রাচীন ভারতীয় দার্শনিকের চোখে মানব জীবনের অনিবার্য নিয়তি
প্রাচীন ভারতের বিখ্যাত দার্শনিক ও সর্বশাস্ত্রবিদ চাণক্য তাঁর নীতিশাস্ত্র গ্রন্থে মানব জীবনের এক অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। তিনি দাবি করেছেন, মানুষের জীবনে পাঁচটি মৌলিক বিষয় জন্মের পূর্বেই নির্ধারিত হয়ে যায়, যা কোনোভাবেই পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
প্রথমত, চাণক্যের মতে, প্রতিটি মানুষের আয়ুষ্কাল মাতৃগর্ভে থাকাকালীনই নির্দিষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন, "আমরা যতদিনের আয়ু নিয়ে এসেছি, তা আর নড়চড় হওয়ার উপায় নেই।"
দ্বিতীয়ত, তিনি উল্লেখ করেন যে, বর্তমান জীবনের অভিজ্ঞতা পূর্বজন্মের কর্মফলের প্রতিফলন। "গত জন্মে ভালো কিছু করলে এ জন্মে ভালো ফল লাভ করা সম্ভব। অন্যদিকে গত জন্মের কুকর্মের ফলেই এ জন্মে চেষ্টা করেও সাফল্য পাওয়া যায় না," বলে তিনি ব্যাখ্যা করেন।
তৃতীয়ত, চাণক্য মনে করেন, একজন ব্যক্তির জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার পরিমাণও জন্মের পূর্বেই নির্ধারিত হয়ে যায়। তাঁর মতে, "আপনার ইচ্ছে ও চেষ্টা থাকলেও শিক্ষালাভ করা আপনার ভাগ্যে না থাকলে তা কিছুতেই সম্ভব হবে না।"
চতুর্থত, তিনি বলেন, প্রত্যেকের সম্পদের পরিমাণও পূর্বনির্ধারিত। চাণক্য পরামর্শ দেন, "ভাগ্যে ঠিক যতটা আছে হাজার চেষ্টা করেও তার বেশি অর্থ উপার্জন করা কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়। সেই কারণে যার কাছে যতটা পরিমাণ অর্থ রয়েছে, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকা উচিত।"
পঞ্চমত এবং সর্বশেষে, চাণক্য দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে প্রতিটি ব্যক্তির মৃত্যুর সময় ও স্থান জন্মের আগেই নির্ধারিত হয়ে যায়। তিনি সতর্ক করে দেন, "তাই সব সময় আমাদের ভালো করা উচিত। না হলে খারাপ কাজের ফল পরের জন্মে গিয়ে ভোগ করতে হয়।"
চাণক্যের এই দর্শন আমাদের জীবনের প্রতি একটি গভীর দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। তবে এই মতবাদ নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। অনেকে মনে করেন, এটি মানুষের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা ও পরিবর্তনের ক্ষমতাকে খাটো করে দেখে। যাই হোক, চাণক্যের এই চিন্তাধারা আজও অনেকের জীবনদর্শনকে প্রভাবিত করে চলেছে।
Post a Comment