ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ইনসুলিনের ভূমিকা এবং এর প্রয়োগ সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত
ডায়াবেটিস বা মধুমেহ একটি জটিল রোগ, যা বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই রোগের চিকিৎসায় ইনসুলিনের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু কখন এবং কীভাবে ইনসুলিন গ্রহণ করতে হবে, তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই বিভ্রান্তি রয়েছে। আসুন জেনে নেই বিশেষজ্ঞদের মতামত।
ইনসুলিন হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন যা মানবদেহের অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হয়। এর প্রধান কাজ হলো রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা। খাদ্য গ্রহণের পর যখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, তখন ইনসুলিন দেহের কোষগুলোকে এই গ্লুকোজ গ্রহণ করতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস রোগে শরীর হয় পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, নয়তো তৈরি হওয়া ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এই অবস্থায় কৃত্রিম ইনসুলিন প্রয়োগের প্রয়োজন দেখা দেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অভুক্ত অবস্থায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৭ মিলিমোল/লিটারের বেশি হলে তা ডায়াবেটিস হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে এই মাত্রায় সবসময় ইনসুলিন প্রয়োজন পড়ে না। সাধারণত, যখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ১৬.৭ মিলিমোল/লিটারের উপরে যায়, তখন চিকিৎসকরা ইনসুলিন প্রয়োগের পরামর্শ দেন।
১. টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস:
- সাধারণত ১৮ বছর বয়সের আগে শুরু হয়
- জেনেটিক কারণে হয়
- রোগীদের শরীরে ইনসুলিন প্রায় থাকেই না
- এই ধরনের রোগীদের জীবনভর ইনসুলিন নিতে হয়
২. টাইপ টু ডায়াবেটিস:
- সাধারণত মধ্যবয়স বা বার্ধক্যে দেখা দেয়
- শরীরে ইনসুলিন থাকে, কিন্তু পর্যাপ্ত নয় বা কার্যকর নয়
- প্রথমে ঔষধ, খাদ্যনিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়াম দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়
- এসব ব্যর্থ হলে ইনসুলিন প্রয়োগ করা হয়
জাতীয় অধ্যাপক ড. একে আজাদ খান, বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির সভাপতি, বলেন, "টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের অবশ্যই ইনসুলিন নিতে হবে। অন্যদিকে, টাইপ টু ডায়াবেটিসে, যখন অন্যান্য পদ্ধতিতে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসে না, তখনই ইনসুলিন প্রয়োগ করা হয়।"
ইনসুলিন গ্রহণের সিদ্ধান্ত একান্তভাবেই চিকিৎসকের উপর নির্ভর করে। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা, ডায়াবেটিসের ধরন, রোগীর বয়স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসক ইনসুলিন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং নির্দেশিত চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Post a Comment