গবেষণায় প্রমাণিত: নিয়মিত সজনে পাতা সেবনে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ সহ নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকার
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি বাড়ির উঠানে দেখা যায় সজনে গাছ। কিন্তু এই সাধারণ গাছটির অসাধারণ ঔষধি গুণ সম্পর্কে অনেকেই অবগত নন। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, সজনে পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণসহ নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে অত্যন্ত কার্যকর।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. আশরাফুল ইসলাম বলেন, "সজনে গাছের বৈজ্ঞানিক নাম মরিঙ্গা ওলিফেরা। এর প্রতিটি অংশেই রয়েছে চমৎকার ঔষধি গুণ। বিশেষ করে পাতায় রয়েছে বিটা-সিটোস্টেরোল ও এক্যালয়েডস-মোরিনাজিন নামক ঔষধি রাসায়নিক পদার্থ।"
গবেষণায় দেখা গেছে, সজনে পাতার নিয়মিত ব্যবহারে:
১. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: প্রতিদিন মাত্র ৫০ গ্রাম সজনে পাতা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর এন্টি-অক্সিডেন্ট ও আইসোথিয়োকাইনেটস উপাদান ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
২. রক্তশূন্যতা দূর: সজনে পাতায় পালংশাকের তুলনায় ২৫ গুণ বেশি আয়রন রয়েছে, যা রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
৩. হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস: এতে রয়েছে কোলেস্টেরল কমানোর বৈশিষ্ট্য, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
৪. ত্বকের যত্ন: সজনে পাতার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য ত্বকের যত্নে সহায়ক।
৫. ঘুমের মান উন্নয়ন: এর পুষ্টি উপাদান শরীরে শক্তি বাড়ায় এবং ভালো ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসরণে সাহায্য করে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির সদস্য ডা. নাসরিন আক্তার জানান, "সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি, প্রোটিন, পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে। এসব উপাদান শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে সহায়ক।"
ডায়াবেটিস রোগী শফিকুল ইসলাম (৫৫) বলেন, "গত ৩ মাস ধরে আমি প্রতিদিন সকালে সজনে পাতার চা পান করছি। এতে আমার রক্তে শর্করার মাত্রা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে।"
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, সজনে পাতা ডায়াবেটিসের ঔষধের বিকল্প নয়। এটি পরিপূরক চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। সজনে পাতা সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সজনে পাতার এই গুণাগুণ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ালে অনেক রোগী উপকৃত হতে পারেন। তবে এর পাশাপাশি সুষম খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম অত্যন্ত জরুরি।
Post a Comment