ধ্বংসস্তূপে পরিণত রাহুল আনন্দের ঐতিহ্যবাহী বাসভবন: এক যুগান্তকারী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের করুণ পরিণতি

ফরাসি প্রেসিডেন্টের পরিদর্শন থেকে দুর্বৃত্তদের হামলা: 'জলের গান'-এর স্বপ্নভূমির পতন



ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে অবস্থিত ১৪০ বছরের পুরনো বাড়িটি আর নেই। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী রাহুল আনন্দের বাসভবন ও স্টুডিও হিসেবে পরিচিত এই ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটি গত সোমবার দুর্বৃত্তদের হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এই ঘটনা শুধু একটি বাড়ির ক্ষতি নয়, বরং বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতির সাক্ষী।


'জলের গান' ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা রাহুল আনন্দ ও তাঁর স্ত্রী উর্মিলা শুক্লা এই বাড়িটিকে কেবল বসবাসের স্থান হিসেবেই নয়, একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে তুলেছিলেন। 'আনন্দপুর' নামে পরিচিত এই স্থানটি ছিল গান রচনা, বাদ্যযন্ত্র নির্মাণ এবং সংগীত প্রযোজনার এক অনন্য কেন্দ্রবিন্দু।


পুরাতন স্থাপত্যের নিদর্শন এই বাড়িটি ছিল এক জীবন্ত যাদুঘর। লম্বা বারান্দায় ঝুলন্ত কুপিবাতি, হ্যারিকেন, পুরনো চিঠির বাক্স থেকে শুরু করে পিতল ও কাষ্ঠশিল্পের নমুনা - সবকিছুই ছিল এর অলংকরণ। বাড়ির চারপাশে ঘেরা গাছপালা ও পাখির কলতান এই স্থানটিকে দিয়েছিল এক অনন্য পরিবেশ।


গত বছর সেপ্টেম্বরে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রঁ এই বাড়ি পরিদর্শন করেন। তিনি রাহুল আনন্দের সঙ্গে গান গেয়ে ও একতারা বাজিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা অতিবাহিত করেন। এই ঘটনা বাড়িটির আন্তর্জাতিক গুরুত্বকে তুলে ধরে।


রাহুল আনন্দ ও তাঁর দল বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তাঁদের অংশগ্রহণ লক্ষণীয় ছিল। এই সামাজিক সক্রিয়তা কি তাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের কারণ হতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।


রাহুল আনন্দের ভাষায়, "আমি ও আমার স্ত্রী দুজনই পুরোনো মানুষ, পুরোনো বাড়ি, পুরোনো বৃক্ষ, পুরোনো সংস্কৃতিকে খুব ভালোবাসি।" কিন্তু দুঃখজনকভাবে, সেই ভালোবাসার প্রতীক আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত। এই ঘটনা শুধু একটি বাড়ির ধ্বংস নয়, এটি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপর এক আঘাত। তবে আশা করা যায়, এই ধ্বংসের মধ্য থেকেও নতুন করে জেগে উঠবে শিল্প ও সংস্কৃতির চেতনা।

Post a Comment