ছাত্র আন্দোলনের নেতা থেকে সরকারি উপদেষ্টা: আসিফ মাহমুদের অসাধারণ যাত্রা

মর্গে খোঁজা ছেলের সাফল্যে গর্বিত পিতা, এলাকাবাসীর আনন্দ



বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সবুজ ভূইয়া সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন। এই অসামান্য সাফল্যে তাঁর শিক্ষক পিতা বিল্লাল হোসেন গর্বিত বোধ করছেন।


আসিফ মাহমুদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আকুবপুর গ্রামে। তাঁর পিতা মো. বিল্লাল হোসেন একজন প্রধান শিক্ষক এবং মাতা রোকসানা আক্তার একজন গৃহিণী। তিনজন বোনের মাঝে আসিফ একমাত্র ছেলে সন্তান।


আসিফের শিক্ষাজীবন শুরু হয় স্থানীয় বিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। সর্বত্র উত্কৃষ্ট ফলাফলের জন্য তিনি প্রথম প্রচেষ্টায়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান। বর্তমানে তিনি একই বিভাগে মাস্টার্স কোর্সে অধ্যয়নরত।


আসিফ পরিবারের অজান্তেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন। পরিবার যখন জানতে পারে, তখন তাঁরা তাঁকে ফিরে আসার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু আসিফ দৃঢ়তার সাথে বলেন, "আমার অনেক ভাই-বোন পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছেন। আমি আন্দোলন থেকে ফিরে আসব না। হয় গুলি খেয়ে মরব, না হয় আন্দোলন সফল করে ঘরে ফিরব।"



আন্দোলনের সময় আসিফ পাঁচ দিন নিখোঁজ ছিলেন। এই সময়ে তাঁর পরিবার চরম উদ্বেগ ও আতঙ্কের মধ্য দিয়ে যায়। তাঁরা মর্গ সহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। পরে তাঁকে হাতিরঝিল এলাকায় অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়।


আন্দোলনের সফলতার পর, আসিফ মাহমুদকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এই অর্জন তাঁর পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক আনন্দ ও গর্বের সৃষ্টি করেছে।



আসিফের পিতা বিল্লাল হোসেন বলেন, "ছেলেটার একরোখা স্বভাব তাকে আজ সরকারের উপদেষ্টা বানিয়েছে। একজন বাবা হিসেবে আমি অনেক গর্বিত। আমি আমার শিক্ষকতা জীবনকে সার্থক মনে করছি ছেলের এমন সাফল্যে।"


বিল্লাল হোসেন আন্দোলনে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা, চাকরির ব্যবস্থা এবং সকল আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, দৃঢ় সংকল্প ও নীতিবোধ একজন সাধারণ গ্রামের ছেলেকেও জাতীয় নেতৃত্বের স্তরে নিয়ে যেতে পারে।

Post a Comment