বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়লেও, প্রারম্ভিক বয়সে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গ্রহণ করে ভবিষ্যতে ক্যান্সারের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো যায়
ক্যান্সারের ঝুঁকি বয়সের সাথে বাড়ে, কিন্তু প্রারম্ভিক বয়সে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গ্রহণ করে জীবনের পরবর্তী সময়ে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো যায়। পুরুষদের জন্য ২০, ৩০ ও ৪০ বছর বয়সে সঠিক পছন্দ করা ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই গুরুত্বপূর্ণ দশকগুলিতে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা, সম্ভাব্য ঝুঁকির কারণগুলি চিহ্নিত করা এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনন্য সুযোগ রয়েছে।
২০ বছর বয়সে করণীয়:
১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করুন: ফল, সবজি, সম্পূর্ণ শস্য এবং কম চর্বিযুক্ত প্রোটিনসমৃদ্ধ সুষম খাবার খান। প্রক্রিয়াজাত খাবার ও লাল মাংসের পরিমাণ সীমিত রাখুন এবং অতিরিক্ত মদ্যপান এড়িয়ে চলুন।
২. নিয়মিত ব্যায়াম করুন: প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম করার লক্ষ্য রাখুন। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে এবং বিভিন্ন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৩. তামাকজাত পণ্য এড়িয়ে চলুন: ধূমপান ও তামাক ব্যবহার ক্যান্সারের প্রধান কারণ। যদি আপনি ধূমপান করেন, তবে ছাড়ার জন্য সহায়তা নিন এবং পরোক্ষ ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
৪. ত্বক সুরক্ষিত রাখুন: উচ্চ এসপিএফযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, সুরক্ষামূলক পোশাক পরুন এবং ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে ট্যানিং বেড এড়িয়ে চলুন।
৫. টিকা নিন: এইচপিভি টিকার মতো টিকা নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সার থেকে রক্ষা করতে পারে। প্রয়োজনীয় টিকা সম্পর্কে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে আলোচনা করুন।
৩০ বছর বয়সে করণীয়:
১. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান: স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চেক-আপ সম্ভাব্য সমস্যাগুলি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরতে সাহায্য করতে পারে। আপনার পারিবারিক ইতিহাস ও ব্যক্তিগত ঝুঁকির কারণগুলির ভিত্তিতে উপযুক্ত স্ক্রিনিং সম্পর্কে আপনার চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করুন।
২. স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করুন: দীর্ঘমেয়াদী স্ট্রেস আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে মাইন্ডফুলনেস, ব্যায়াম বা শখের মতো স্ট্রেস-ব্যবস্থাপনা কৌশল অনুশীলন করুন।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ স্থূলতা বেশ কয়েকটি ক্যান্সারের বর্ধিত ঝুঁকির সাথে সম্পর্কিত। আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুষম খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়ামের ওপর মনোনিবেশ করুন।
৪. মদ্যপান সীমিত রাখুন: অতিরিক্ত মদ্যপান মুখ, গলা, খাদ্যনালী ও যকৃতের ক্যান্সারের বর্ধিত ঝুঁকির সাথে সম্পর্কিত। মদ্যপান মাত্রা মধ্যম পর্যায়ে রাখুন বা সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলুন।
৫. আপনার পারিবারিক স্বাস্থ্য ইতিহাস জানুন: আপনার পরিবারের স্বাস্থ্য ইতিহাস বোঝা আপনাকে ও আপনার চিকিৎসককে বংশগত ক্যান্সারের ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে এবং অতিরিক্ত স্ক্রিনিং প্রয়োজন কিনা তা নির্ধারণ করতে সাহায্য করতে পারে।
৪০ বছর বয়সে করণীয়:
১. নিয়মিত স্ক্রিনিং শুরু করুন: ৪০ বছর বয়সে, আপনার ঝুঁকির কারণ ও পারিবারিক ইতিহাসের উপর নির্ভর করে কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের মতো ক্যান্সারের নিয়মিত স্ক্রিনিং শুরু করুন। প্রাথমিক সনাক্তকরণ ভালো ফলাফলের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
২. হৃদস্বাস্থ্যের উপর মনোনিবেশ করুন: স্বাস্থ্যকর হৃদয় কম ক্যান্সারের ঝুঁকির সাথে সম্পর্কিত। সামগ্রিক সুস্থতা সমর্থন করতে হৃদয়ের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ধূমপান এড়িয়ে চলা অব্যাহত রাখুন।
৩. আপনার জীবনধারার অভ্যাসগুলি পুনর্মূল্যায়ন করুন: বয়স বাড়ার সাথে সাথে, আপনার খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামসহ জীবনধারার পছন্দগুলি পুনর্মূল্যায়ন ও সমন্বয় করুন যাতে সেগুলি আপনার স্বাস্থ্য লক্ষ্য ও প্রয়োজনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
৪. যেকোনো স্বাস্থ্য সমস্যা দ্রুত মোকাবেলা করুন: স্থায়ী লক্ষণ বা আপনার স্বাস্থ্যের পরিবর্তন উপেক্ষা করবেন না। সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সমস্যার প্রাথমিক নির্ণয় ও চিকিৎসা তাদের আরও গুরুতর অবস্থায় পরিণত হওয়া প্রতিরোধ করতে পারে।
৫. অবহিত থাকুন: ক্যান্সার প্রতিরোধের উপর সর্বশেষ গবেষণা ও সুপারিশ সম্পর্কে জানুন। জ্ঞান আপনাকে আপনার স্বাস্থ্য ও জীবনধারা সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম করে।
২০, ৩০ ও ৪০ বছর বয়সে সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া আপনার ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ, নিয়মিত চেক-আপ করা এবং অবহিত থাকার মাধ্যমে আপনি আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে ও জীবনের মান বাড়াতে পারেন।
Post a Comment